আপনার আড্ডা গল্পের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী কফিরও কিন্তু একটা গল্প আছে। চলুন আজ জেনে নেই এক অজানা বুনো ফল কিভাবে হয়ে উঠলো আমাদের প্রিয় কফি।
কফির ইতিহাস |
কফির গল্পের শুরুটা ইথিওপিয়ার কালদির সাথে। একদিন হঠাৎ যখন তার ছাগলের দল এক অজানা ফলের বীজ খেয়ে ফেলল, তখন তাদের লাফালাফি গেল বেড়ে আর রাতের ঘুম গেল উড়ে। কালদি তার ছাগলের সাথে ঘটে যাওয়া এই মজার গল্পটা বললেন ঐ গ্রামের মঠ প্রধানের কাছে। রাতে ঘুম না হওয়ার কথাটা মঠ প্রধানের মাথায় থেকে গেল। পরের রাতে প্রার্থনার প্রস্তুতি হিসেবে সে ঐ ফলের বীজ গুড়ো করে খেয়ে নিলেন কিছুটা এবং পেলেন অবাক করা ফলাফল। তারপর থেকে মঠের সব ভিক্ষুকই তাদের প্রার্থনার আগে খেতেন ঐ ফলের বীজ। আর তখন থেকেই তন্দ্রাচ্ছন্নতা দূর করতে শুরু হলো প্রিয় কফির ব্যবহার।
১৫শ শতাব্দী শুরুর দিকে কফির চাষ শুরু হয় আরবীয় উপদ্বীপ সমূহে। ১৬শ শতাব্দীর আগেই কফির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ল তুর্কি, পার্শিয়া, মিশর, সিরিয়া সহ পার্শ্ববর্তী দেশ গুলোতে।তখনই প্রচলন হল কফি শপ গুলোর ও। অভিজাত থেকে মধ্যবিত্ত সকলের পছন্দের তালিকায় থাকা কফি ছিল অড্ডা, গল্প, থিয়েটার ও গানের আসরের নিত্য দিনের সঙ্গী।
১৭শ শতাব্দীতে ইউরোপের ভ্রমণকারীরা এই কালো পানীয় পরিচয় করালো তাদের উপমহাদেশে। রঙের জন্য ইউরোপের গ্রামের লোকেরা কফিকে বলত" শয়তানের তিতা আবিষ্কার "। সকল নেতিবাচকতার অবসান হল যখন পোপ অষ্টম ক্লিমেন্ট কফি পান করলেন এবং তা খুবই পছন্দ করলেন। আস্তে আস্তে ইউরোপে শুরু হল কফি হাউজের প্রসার। এমনকি ১৭শ শতাব্দীর মাঝামাঝি লন্ডনে ৩০০ এর বেশি কফি হাউজ ছিল। সকলে তখন মদ ও অনান্য পানীয় বাদ দিয়ে কফির দিকে ঝুকতে শুরু করল।
অন্যদিকে ১৬শ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকেই আমেরিকা, ব্রাজিল সহ পৃথিবীর নানা কোনে ছড়িয়ে পড়ল মন মাতানো স্বাদের কফি। কফির ব্যবসা হয়ে উঠলো রমরমা। ইউরোপিয়ানরা তাদের ঔপনিবেশিক দেশ গুলোতে শুরু করল কফির চাষ। কফি একসময় ইউরোপিয়ান দের হাত ধরে এল ভারতীয় উপমহাদেশে।আজ পৃথিবীর এমন কোন সংস্কৃতি নেই যেখনে কফিকে নিয়ে সৃষ্টি হয়নি হাসি, কান্না, বন্ধুত্ব ও ভালবাসার মুহূর্ত।