সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোন‼️

উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোন নামে পরিচিত। রাজ্যগুলো হচ্ছে—আসাম, অরুণাচল প্রদেশ, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড।

এই সাত রাজ্যের আয়তন ২,৫৫,৫১১ বর্গকিলোমিটার, যা ভারতের মোট এলাকার প্রায় ৭ শতাংশ। এ অঞ্চলের জনসংখ্যা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ।



সেভেন সিস্টার্স টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেন ত্রিপুরার সাংবাদিক জ্যোতি প্রসাদ সাইকিয়া- এসব অঞ্চলে গারো, খাসিয়া, বোরো, মিজোদের মতো অনার্য আদিবাসী রাজাদের শাসন ছিল। মিজোরাম এবং মণিপুর রাজ্য আসামের বরাক উপত্যকার মাধ্যমে ভারতের বাকি অংশের সাথে যুক্ত। এই আন্তঃনির্ভরতার কারণে ১৯৭২ সালে এই সাতটি রাজ্যকে সেভেন সিস্টার্স বা সাত বোনের মর্যাদা দেওয়া হয়। ত্রিপুরার সাংবাদিক জ্যোতি প্রসাদ সাইকিয়া এই সাতটি রাজ্যকে একসূত্রে বলার জন্য এই টার্মটি প্রথম ব্যবহার করেন। এসব রাজ্যের রয়েছে চমৎকার ভূখণ্ড, উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগত আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাহার। তাই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে সহজেই।


১. আসামঃ

আসামের রাজধানী দিসপুর। একে ঘিরে রয়েছে ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশ। এর আয়তন ৭৮,৪৩৮ বর্গকিলোমিটার। রাজ্যটি বিলুপ্তপ্রায় ভারতীয় একশৃঙ্গ গণ্ডার সংরক্ষণের চেষ্টা করছে। মধ্যযুগে আসাম দুটি রাজবংশ- কোচ এবং অহম দ্বারা শাসিত হতো। কোচদের উৎস ছিল তিব্বতী-বার্মা অঞ্চল এবং অহমদেরও ছিল তাই যারা উত্তর আসাম শাসন করত। এই সময় ভারতবর্ষ অনেক আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে কিন্তু ব্রিটিশ ছাড়া আসাম কোনো বিদেশি শক্তির শাসনে আসেনি। এমনকি মোঘলরা ১৭ বার আসাম আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়।


আসামের_রাজধানী_দিসপুরঃ-

১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ইঙ্গ-বর্মী যুদ্ধের পর পশ্চিম আসাম ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক গৃহীত হয়। এরপর ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে এখানকার রাজা পুরন্দর সিংহ উচ্চ আসাম দখল করলেও পাঁচ বছর পরে এই এলাকা ব্রিটিশ শাসনাধীনে চলে যায়। ব্রহ্মপুত্র নদ আসামের পূর্বগামী নদ। এই নদটি অরুণাচল প্রদেশ হয়ে এ রাজ্যে প্রবেশ করেছে। দেশের উত্তর-পূর্ব দিকের প্রবেশদ্বার আসাম ঘন সবুজ বন, উর্বর সমভূমি, বিশালাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ, সুন্দর পাহাড়, নীলাভ পর্বত, বিস্ময়কর চা চাষের উপত্যকা এবং প্রসিদ্ধ উদ্ভিদ ও প্রাণীকূল দ্বারা সমৃদ্ধ।


২. মেঘালয়ঃ

মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। এটি ভারতের ২১তম রাজ্য। এর আয়তন ২২,৪২৯ বর্গকিলোমিটার। গারো পাহাড়, খাসি পাহাড়, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই রাজ্যটি। ১৯৭০ সালে আসামের দুটি জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মেঘালয়ের জন্ম হয়েছিল। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলা ভাগ হওয়াকালীন মেঘালয় পূর্ব বাংলা ও আসামের এক নতুন প্রাদেশিক অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।


মেঘালয়ের রাজধানী- শিলংঃ-

১৯১২ সালে পুনর্বার বিভাজনকালে মেঘালয়, আসামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। মেঘালয় ছবির মতো সুন্দর একটি রাজ্য। সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে এই মেঘালয়কে বলা হয় ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’।


৩. নাগাল্যান্ডঃ

নাগাল্যান্ডের রাজধানী কোহিমা। এটি ভারতের ক্ষুদ্রতম রাজ্যগুলোর একটি। এর আয়তন ১৬,৫৭৯ বর্গকিলোমিটার। ভারতের স্বাধীনতার ঠিক আগের দিন ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নাগারা নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করেও সুফল পায়নি। ১৯৫১ সালের মে মাসে নাগাল্যান্ডে একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাগাদের স্বাধীনতার পক্ষে পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ পায়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তাদের পক্ষ সমর্থন করেনি। অবশ্য ১৯৬৩ সালে আসাম থেকে আলাদা করে ভারতের ১৬তম রাজ্য হিসেবে গঠন করা হয় নাগাল্যান্ড। উল্লেখ্য, ১৮৭৪ সালে আসাম আলাদা হলেও ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গে তাকে আবার বাংলায় যুক্ত করা হয়।


নাগাল্যান্ডের রাজধানী-কোহিমাঃ-

১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের পর তা আবার নর্থ-ইস্ট ফ্রন্টিয়ারের অংশ হয়। ভারতের স্বাধীনতার পর তখন থেকে নাগাল্যান্ড আলাদা হয়। নাগাল্যান্ডে পর্যটকদের আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে বাঁশের আসবাবপত্র সংক্রান্ত পণ্য যেমন: টেবিল, ছবির ফ্রেম, পর্দা, উইন্ডো শেড এবং পর্দা, চেয়ার, ওয়াল হ্যাঙ্গিং, কম্বল প্রভৃতি। এছাড়া বেতের আসবাবপত্রও রয়েছে। রাজ্যটির রাষ্ট্রীয় মিউজিয়াম কোহিমায় অবস্থিত, নাগাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার এটি সেরা জায়গা। নাগাল্যান্ডে বন্য পশুপাখি ও প্রাণীদের জন্য রয়েছে ফকিম, ইন্টাকি ও পুলি ব্যাজ অভয়ারণ্য।


৪. মিজোরামঃ

মিজোরামের রাজধানী আইজল। এটি উত্তর ও দক্ষিণ লুসাই পার্বত্য জেলাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এর আয়তন ২১,০৮৭ বর্গকিলোমিটার। এটি দেশের ২৩তম রাজ্য। এই রাজ্যের বিশাল পাইনের গুচ্ছ, নান্দনিক প্রাকৃতিক দৃশ্য, বাঁশের ওপর নির্মিত ঘরের গ্রাম দেয় অপূর্ব সৌন্দর্য। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলো—সোনাই, টুইভাওয়াল, তালেং, কোলোডাইন এবং কামাফুলি। খ্রিস্টীয় ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মিজো উপজাতিরা নিকটস্থ চীন পর্বত থেকে এসে এখানকার স্থানীয় আদিবাসীদের পরাজিত করার মাধ্যমে তারা বসতি স্থাপন শুরু করে। তারা নিজস্ব একটি সমাজব্যবস্থার সূচনা করে।


মিজোরামের রাজধানী- আইজলঃ-

পরে মিজোরা সেখানে একটি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের উত্থাপন ঘটায়। ১৮২৬ সালে আসাম ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত মিজোরাম উপজাতিদের ওপর বিদেশি রাজনৈতিক শক্তির কোনো হস্তক্ষেপ ছিল না। ১৮৯০ সালের দিকে মিজোরাম ব্রিটিশদের দখলে আনুষ্ঠানিকভাকে যুক্ত না হলেও এর ওপর নিয়ন্ত্রণ দুই যুগ আগেই আসে।


৫. ত্রিপুরাঃ

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা। এটি ভারতের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম রাজ্য। এর আয়তন ১০,৪৮৬ বর্গকিলোমিটার। দীর্ঘ সময়ব্যাপী রাজ্যটি ত্রিপুরি সাম্রাজ্যের শাসনাধীন ছিল। ব্রিটিশরাও শাসন করে। ত্রিপুরা ১৯৪৯ সাল থেকে স্বাধীন ভারতের একটি অংশ হয়। ১৯৫৬ সালে রাজ্যটি কেন্দ্রশাসিত একটি অঞ্চলে রূপ নেয়।


ত্রিপুরার রাজধানী- আগরতলাঃ-

বাঙালি, ত্রিপুরি, মণিপুরী, রিয়াং, জামাতিয়া, কোলোই, নোয়াতিয়া, চাকমা, মুরাসিং, গারো, হালাম, মিজো, কুকি, মুন্ডা, মোগ, সাঁওতাল, উচোই ও ওঁরাও—এসব বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর অবস্থানের ফলে এখানকার সংস্কৃতিতেও রয়েছে বৈচিত্র্য। এখানে বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যাও অনেক। প্রধান কথ্য ভাষাগুলো হলো ককবরক ও বাংলা।




৬. অরুণাচল প্রদেশঃ

অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগর। এ প্রদেশের বেশিরভাগ অঞ্চল পর্বতবেষ্টিত। এর আয়তন ৮৩,৭৪৩ বর্গকিলোমিটার। এ প্রদেশের উঁচুনিচু, এলোমেলোভাবে বিস্তৃত ঢালযুক্ত ভূখণ্ড প্রদেশটিকে দিয়েছে আলাদা মাত্রা। তাছাড়াও এর রয়েছে বিশাল হিমালয়ের উচ্চশৃঙ্গ। এখানকার প্রধান নদী ব্রহ্মপুত্র। এটি এ প্রদেশে সিয়াং নামে পরিচিত।


অরুণাচলের রাজধানী- ইটানগরঃ-

১৮২৬ সালে আসাম ব্রিটিশ ভারতের অংশ হলে অরুণাচল প্রদেশকেও ব্রিটিশের অধীনে আনার সবরকম প্রচেষ্টা চালানো হয়। এরপরও ১৮৮০ সাল পর্যন্ত এখানে ব্রিটিশরা আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। এ প্রদেশের জনসংখ্যার বেশিরভাগ গোড়া এশিয়াভিত্তিক। তবে তিব্বত এবং মায়ানমারের মানুষের সাথে এদের শারীরিকভাবে অনেক মিল রয়েছে। এ প্রদেশের বিখ্যাত স্থানগুলো হলো তাওয়াং, বোমডিলা, ভীষ্মকানগর এবং আকাশিগঙ্গা। চারটি জাতীয় উদ্যান এবং সাতটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণের একটি স্থান হচ্ছে বৌদ্ধ বিহার। মলিনীথান এবং ভীষ্মকানগর এই প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এখানকার পরশুরাম কুণ্ড একটি বিশিষ্ট তীর্থস্থান।


৭. মণিপুরঃ

মণিপুরের রাজধানী হলো ইম্ফল। এর আয়তন প্রায় ২২,৩২৭ বর্গকিলোমিটার। ১৯৯৭ সালে রাজধানীটি পূর্ব ইম্ফল ও পশ্চিম ইম্ফল নামে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। ভারতের স্বাধীনতার পর মণিপুর সংবিধান আইন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি মণিপুর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা অর্জন করে। এ রাজ্যের চারটি প্রধান নদী অববাহিকা হচ্ছে মণিপুর নদী অববাহিকা, বরাক নদী অববাহিকা, ইয়ু নদী অববাহিকা এবং লানইয়ে নদী অববাহিকা। উল্লেখ্য, প্রথম আ্যংলো-মণিপুরী যুদ্ধের পরে ১৮৯১ সালে মণিপুর রাজ্যটি ব্রিটিশের শাসনে চলে আসে। ব্রিটিশরা ইম্ফল দখল করার পর যুবরাজ টেকেন্দ্রাজিৎ এবং জেনেরাল থাঙ্গালকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।


মণিপুরের রাজধানী- ইম্ফলঃ-

এ রাজ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন মানুষের সংস্কৃতি বিভিন্ন। এটি সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জাঁকজমকে ভরপুর। একটি বিরল প্রজাতির হরিণ ‘সাংগাই’-এর আবাসস্থলও এখানে। জওহরলাল নেহেরু মণিপুরকে ‘ভারতের রত্ন’ হিসেবে বর্ণনা করেন।


The A'pal BD News

Welcome to The A'pal BD News, your number-one source for all the latest news all over Bangladesh and worldwide. on Government Service rules and regulations of Bangladesh. We’re dedicated to providing you the very best of your questions, with an emphasis on demand, Categorizes, type of orders, and availability.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন